পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি অনেক আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই এলাকাটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। কপোতাক্ষ নদের তীরে এই বাণিজ্য কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রায়সাহেব বিনোদবিহারী সাধুর বাড়িকে ঘিরে রাজাকাররা শক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলে। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে এই রাজাকার ঘাঁটিটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং ভয়ংকর। এলাকাটিতে অধিক সংখ্যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাস হওয়ায় অত্যাচার নির্যাতন ছিল সীমাহীন। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত-করণ সকল রকম অত্যাচার নির্যাতন এই ক্যাম্পে সংঘটিত হয়েছে।
প্রথমদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের, তারপর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা ও নির্যাতন করেছে। ক্যাম্প স্থাপনের পর প্রথমেই তারা ডাঃ ফণিভূষণ নাথ, উমাপদ দেও চৈতন্য মল্লিককে ধরে এনে কপিলমুনি বাজারের ফুলতলা নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের ঘাটে হত্যা করে পানিতে ভাসিয়ে দেয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মনি সিং, জ্ঞান সিং, নরেন সিং, কানু পোদ্দার, তারাপদ ডাক্তার, জিতেন্দ্রনাথ সিং, শান্তিরাম সিংসহ বহু হিন্দুকে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে। যখন তখন যাকে তাকে ধরে এনে ইচ্ছামত হত্যা করতো। স্থানীয় মুসলিম লীগ ও শান্তি কমিটির সদস্যদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী তারা এলাকার বিভিন্ন বাড়ি লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করতো, হিন্দু নারীদের ধরে এনে ধর্ষণ করে হত্যা করতো।
ঐ ক্যাম্পে ৬ টি কক্ষ নির্ধারিত ছিল ধর্ষণ অত্যাচারের জন্য। বহু নারীকে ধর্ষণের পর পেট ফুঁড়ে নদীর পানিতে ফেলে দিত। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে রত্না নামের একটি মেয়েকে সারারাত অত্যাচার করার পর তাকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিলে তার ভাসমান লাশ দেখে স্থানীয় মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা একাধিকবার রাজাকারদের এই ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়। অবশেষে ডিসেম্বরের ৮ -৯ তারিখে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার কামরুজ্জামান টুকুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এই রাজাকার ক্যাম্পের পতন ঘটায়। ক্যাম্পের ভেতরে একটি কক্ষের দেয়ালে একজনকে পেরেক দিয়ে আটকে রাখা দেখে মুক্তিযোদ্ধারা। তিনি হলেন, তালা উপজেলার মাছিয়াড়া গ্রামের রহিম বক্স গাজীর ছেলে সৈয়দ গাজী। সৈয়দ ঐ ক্যাম্পে রাজাকারদের সাথে থাকতেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা।
রাজাকাররা তার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারলে তাকে অকথ্য নির্যাতন করে হত্যার পর দেয়ালে পেরেক দিয়ে আটকে রাখে। রাজাকার ক্যাম্প পতনের পর এখান থেকে ধরা পড়া ১৫১ জন রাজাকারকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। এই ক্যাম্প পতনের পর সেখান থেকে প্রাপ্ত কাগজপত্র থেকে জানা যায় রাজাকাররা ১৬০১ মতান্তরে ১৬১০ জনকে হত্যা করে। আমরা মনে করি জুন-জুলাই মাস থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই দীর্ঘসময়ে এই বিশাল ঘাঁটি থেকে কমপক্ষে ৫০০০ মানুষকে রাজাকাররা নির্মমভাবে হত্যা করে।
***
Razakars set up their base camp in the house of Binodbihari Sadhu. This camp was one of the biggest and vicious camp of Khulna area. As a large number of Hindus used to live in this area, Hindus were the primary target of Razakars. Murder, rape, looting, arson, conversion of religion, torture – everything took place here during the whole war time. They brutally tortured and killed freedom fighters and supporters of Bengali nationalism. Local members of Muslim League and Peace committee had a list, and they used to loot houses, abduct and rape women according to this list. There were 6 rooms in the camp only for rape and torturing. Freedom fighters liberated the camp after several attempts. At least 5000 people were killed in this camp from June-July.